ইতিকাফের শর্তাবলী: নিয়্যাত করা- বিনা নিয়্যাতে ইতিকাফ করলে সহীহ্ হবে না। এমন মসজিদে ইতিকাফ করা যেখানে নামাজের জামাআত হয়। ইতিকাফের জন্য সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান হলো মসজিদুল হারাম এরপর মসজিদে নববী (সা.)। এরপর যে মসজিদের মুসল্লী সংখ্যা বেশি। নারীরা তার গৃহে নামাজের স্থানে ইতিকাফ করবে।
মানতের ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। নফল ইতিকাফের জন্য রোজা শর্ত নয়। নফল ইতিকাফের জন্য নির্দিষ্ট কোনো মেয়াদও নেই। ইতিকাফ সহীহ্ হওয়ার শর্ত হলো, মুসলমান হওয়া, জ্ঞানবান হওয়া, অপবিত্রতা এবং হায়িজ ও নিফাস থেকে পবিত্র হওয়া। বালিগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া ইতিকাফ সহীহ্ হওয়ার জন্য কোনো শর্ত নয়। তাই জ্ঞানবান নাবলিগেরাও ইতিকাফ করতে পারবে। নারী জন্য স্বামীর অনুমতি নিয়ে ইতিকাফ করা জায়েজ। অনুমতি দেওয়ার পর স্বামী তাকে ইতিকাফ করতে বারণ করতে পারবেন না। নারী জন্য মসজিদের ইতিকাফ করা নাজায়েজ। (বুখারী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭২)
ইতিকাফের আদব: ইতিকাফের অবস্থায় ভালো ও কল্যাণকর কথা ছাড়া অপ্রযোজনীয় কথা না বলা। ইতিকাফ অবস্থায় কুরআন মজিদ তিলাওয়াত করা, হাদিস পাঠ করা, দ্বীনি ইলম শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেওয়া। এছাড়া রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ও অন্যান্য নবীর সীরাত পাঠ করা উত্তম। ইতিকাফকারী ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্যলাভের নিমিত্ত নিজেকে সম্পূর্ণরূপে তার ইবাদতে নিয়োজিত রাখবে এবং দুনিয়াদারী কাজ-কর্ম থেকে দূরে থাকবে। 
ইতিকাফে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না: বিনা ওজরে মসজিদ থেকে বের হওয়া। বিন ওজরে দিনে বা রাতে সামান্য সময়ের জন্য মসজিদ থেকে বের হলেও ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যায়। অনুরূপভাবে নারীরা তার ঘরের নির্ধারিত স্থান থেকে বের হবে না। পেশাব-পায়খানা ও জুমুআর নামাজ আদায় ইত্যাদি ওজরের কারণে মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েজ। ইতিকাফের স্থানে ঘুমাবে ও পানাহার করবে। এর জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন নেই। কোনো কারণে যদি মসজিদ ভেঙ্গে যায় অথবা জোরপূর্বক মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হয় তাহলে ইতিকাফকারী ব্যক্তি মসজিদ থেকে বের হয়ে সঙ্গে সঙ্গে অন্য মসজিদে চলে যায়, তবে এতে ইতিকাফ নষ্ট হবে না।
জান বা মালের ক্ষতির আশঙ্কা হলেও এই হুকুম প্রযোজ্য হবে। অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার জন্য মসজিদ থেকে বের হবে না। কোনো মৃত ব্যক্তিকে দেখার উদ্দেশ্যে বা তার জানাজা আদায়ের উদ্দেশ্যে ইতিকাফ থেকে বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। অবশ্য ইতিকাফের মানতের সময় যদি রোগীর সেবা, জানাজার নামাজ ও ইলমের মজলিসে যাওয়ার শর্ত করে, তা হলে এসব তার জন্য জায়েজ হবে।
ইতিকাফকারী ব্যক্তি মুয়াজ্জিন হোক বা অন্য কেউ হোক, আজানের জন্য মিনারে আরোহণ করলে ইতিকাফ নষ্ট হবে না। মিনার মসজিদের বাইরে হলেও। ইতিকাফ নষ্ট হওয়ার একটি কারণ হলো, সহবাস বা সহবাসের দিকে আকৃষ্টকারী কাজ, তা দিনেই হোক বা রাতেই হোক। স্বপ্নদোষে ইতিকাফ নষ্ট হয় না। কয়েকদিন পাগল বা বেহুশ থাকার ফলে লাগাতার ইতিকাফ করতে না পারলেও ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যায়।
একেবারে চুপ থাকাকে ইবাদত মনে করে সারাক্ষণ চুপ থাকলে ইতিকাফ মাকরূহ হয়। অন্যথায় মুখের গুনাহসমূহ থেকে চুপ থাকা বড় ইবাদত। ইতিকাফের স্থানকে ব্যবসাস্থল বানানো মাকরূহ। ওয়াজিব ইতিকাফ যে কোনো কারণে নষ্ট হয়ে গেল তার কাজা করা ওয়াজিব।