ওয়াল লাইভ সায়েন্সকে বলেন যে, দাঁতের উপরের স্তর এনামেল এর নীচে আরো দুটি জীবন্ত স্তর থাকে। তিনি বলেন, এই জীবন্ত টিস্যুগুলোর সাথে স্নায়ুর সংযোগ থাকে যা মস্তিস্কে বার্তা পাঠায় যখন ঠান্ডা বা গরম খাবার খাওয়া হয় বা দাঁত ভেঙে যাওয়ার মত চাপ পড়ে দাঁতে।   
জীবন্ত স্তর
বিভিন্ন স্তর নিয়ে দাঁত গঠিত। দাঁতের বাহিরের শক্ত স্তরটির নাম এনামেল এবং এটি জীবন্ত নয়। কিন্তু এর ভেতরের শক্ত অংশটি হাড়ের কোষ দিয়ে গঠিত এবং একে ডেন্টিন বলে। এর নীচের স্তরেই থাকে মজ্জা – এটি নরম টিস্যু দিয়ে গঠিত এবং এতে রক্তনালী ও স্নায়ুও থাকে। এই মজ্জাই দাঁতের মূলকে মাড়ির সাথে যুক্ত করে এবং এটি দাঁতের ওপর থেকে মাড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।
দাঁতের এনামেল ক্ষয় হলে দাঁতে ছিদ্র হয় এবং দাঁতে ব্যথা হওয়ার এটাই মূল কারণ। কার্বোহাইড্রেট, উচ্চমাত্রার প্রক্রিয়াজাত খাবার, মিষ্টি খাবার ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায় যা দাঁতের উপরে প্লাক সৃষ্টি করে।
ইউনিভার্সিটি অফ আরকানসাস এর ডেন্টাল এন্থ্রোপোলজিস্ট এবং ‘ইভুলোশন’স বাইট’ নামক বইয়ের লেখক পিটার আনগার বলেন, প্লাক সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দাঁতে পচন বা ক্ষয় সৃষ্টি করে।
দাঁতের এনামেলে ক্ষয় সৃষ্টি হলে ডেন্টিন উন্মুক্ত হয়ে পড়ে এবং ঠান্ডা, গরম এবং চাপের প্রতি প্রতিক্রিয়ায় ব্যথার সৃষ্টি হয়। যদি ব্যাকটেরিয়া মজ্জায় প্রবেশ করে তাহলে ইনফ্লামেশন ও ইনফেকশন সৃষ্টি করে। দাঁতের ছিদ্রের ভেতরের স্নায়ু প্রতি চুমুক গরম কফির জন্য বা আইসক্রিমের প্রতিটা কামড়ের জন্য আর্তনাদ করে ওঠে। এ কারণে রুট ক্যানেল করানোর প্রয়োজন হতে পারে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত মজ্জাকে বের করে ফেলা হয় এবং এর পরিবর্তে রাবারের উপাদান প্রবেশ করানো হয়। আমেরিকান এসোসিয়েশন অফ এন্ডোডন্টিক্স (এএই) এর মতে, দাঁত ভেঙে গেলেও ব্যথা হতে পারে।
মাড়ির রোগের কারণেও দাঁতে ব্যথা হতে পারে। যখন ব্যাকটেরিয়াগুলো মাড়ির নীচে অবস্থান করে এবং ইমিউন সিস্টেম তাদেরকে মারার চেষ্টা করে তখন মাড়ির রোগ হয়। আনগার বলেন, যখন মাড়ির টিস্যু এবং প্লাক ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে পার্থক্য করতে আমাদের শরীর দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে তখন সে নিজের টিস্যুকেই আক্রমণ করে। তিনি বলেন, মাড়ির রোগ হচ্ছে বিশ্বের ১ নম্বর অটোইমিউন ডিজিজ।
এএই এর মতে, মাড়ির রোগের কারণে মাড়ি সরে যেতে পারে। এর ফলে মাড়ির সামান্য অংশ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে এবং মানুষকে ঠান্ডা ও গরমের প্রতি স্পর্শকাতর করে তুলে।
দাঁতে ব্যথা
আনগার বলেন দাঁত ব্যথার অনুভূতির কথা বেশিরভাগ মানুষই জানেন, তবে এটি আমাদের  বিবর্তনীয় অতীতের একটি অংশ ছিল না। হোমো ইরেক্টাস, নিয়ান্ডারথেলস এবং প্রি-হিস্টোরিক হিউম্যান এর জীবাশ্মে খুব কমই দাঁত ক্ষয় দেখা যায়। এমনকি মানুষ ছাড়া অন্য প্রাইমেটদের মধ্যেও দাঁত ক্ষয় হওয়ার প্রবণতা ততোটা দেখা যায় না যতোটা বর্তমানের মানুষদের মধ্যে দেখা যায়।  আনগার বলেন, আধুনিক মানুষদের মধ্যে দাঁত ক্ষয়ের হাড় বৃদ্ধি পেতে শুরু করে ১৭ শতকে উচ্চমাত্রার পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট ডায়েটে যুক্ত হওয়ার সময় থেকে।
যদিও কিছু জীবাশ্মে দাঁত ক্ষয়ের লক্ষণ দেখা যায়। আনগার বলেন, এই হার খুবই খুবই কম এবং শিকারি ও সংগ্রহকারীদের মধ্যে আমরা এই হার কম পেয়েছি, অন্তত যারা চিনি সমৃদ্ধ বা বেশি কার্বোহাইড্রেটের ডায়েট গ্রহণ করেন না তাদের মধ্যে।
যদিও আনগার এর অতি সাম্প্রতিক কাজে দেখানো হয়েছে যে, আফ্রিকার হাডযা নামক শিকারি-সংগ্রহকারী দলটির মধ্যে দাঁত ক্ষয়ের উচ্চমাত্রা দেখা যায়। এর কারণ তারা মধু খায় ও ধূমপান করে।
স্তন্যপায়ীর ব্যথা
ওয়াল বলেন, পশুদের মানুষের মত দীর্ঘমেয়াদী দাঁতে ব্যথা হতে দেখা যায় না। মানুষের এক সেট স্থায়ী দাঁত থাকে, সরীসৃপ যেমন- কুমিরের দাঁত পড়ে গেলে পুনরায় জন্মায়। 
স্তন্যপায়ীরা দাঁতের বিষয়ে অনেক যত্নশীল হয়। তারা খাবার গেলার পূর্বে অনেক বেশি চিবায়, তাই কখন দাঁত কোথায় কাজ করছে তা বোঝা প্রয়োজন তাদের। এর জন্য মস্তিষ্কের অনেক জটিল নেটওয়ার্ক এর প্রয়োজন দাঁত থেকে পাঠানো সংকেত বোঝার জন্য।
ওয়াল বলেন, এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার জন্য নিয়মিত ফিডব্যাক প্রয়োজন। প্রতিবার খাবার চাবানোর সময় খাদ্যের উপাদান পরিবর্তিত হয়। আপনার জানা প্রয়োজন যে, একবার খাবার চিবানোর পড়ে একই রকম চাপ দিয়ে আপনি খাবার চিবাবেন কিনা।
ওয়াল মনে করেন, আমাদের পূর্ব পুরুষেরা গিলে খেতেন এবং খুব ঠান্ডা খাবার খেতেন। তাপ বা ঠাণ্ডার প্রতি দাঁতের সংবেদনশীলতা দাঁতের চাপের অনুভূতি ও তরলের প্রবাহের প্রতি দাঁতের  সক্ষমতার উপজাত হিসেবে প্রকাশ পায়।
আনগার বলেন, বিবর্তনীয় অতীতে দাঁতে ব্যথার কারণ যাই হোক না কেন বর্তমানে এর থেকে প্রতিকারের উপায় খুবই সাধারণ : মিষ্টি বা এসিড জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন, নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করুন ও ফ্লস ব্যবহার করুন এবং দাঁতে প্লাক জমা প্রতিহত করতে নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ করান।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স